Thursday, September 21, 2006

নামহীন (১৯.০৯.০৬)

নিঃশব্দ কথকতার মধ্যে আরোপিত সুর খোঁজার চেষ্টা করি। একগুঁয়ে ভ্রমরের মতো পরাগ সংগ্রহের চেষ্টায় অসহ্য চিৎকার করে ভাঙাতে চেয়েছি সূযর্মূখী ফুলগুলোর ঘুম। দৃঢ়বিশ্বাসে গুঁজে দিয়েছিলাম নিজের মুখ পরাগ জর্জরিত ফুলের পরাগমন্ডলে। আলগোছে খসে পড়া দৃঢ় দলগুলিকে ডানার ঝাপটায় উড়িয়ে দিয়ে খোঁজ শুরু করেছিলাম নতুন কোন ফুলের। সদ্যভেজা! রক্তাক্ত দুঃস্বপ্নের মাঝে এক ঝটকায় উঠে বসে আটকে আসা শ্বাস পুনরুদ্ধার করতে করতে আবিস্কার করার চেষ্টা করেছিলাম কিছু অভ্রান্ত সত্য। কপাল-মুখ বেয়ে চুঁইয়ে পড়া ঘাম হাতের তালুতে মুছে কঠিন দৃষ্টিতে দুর্ভেদ্য অন্ধকারে খুঁজতে চেয়েছিলাম জোনাকি। কাঁপা হাতে গলায় ঢেলে দেওয়া জল রাস্তা চিনে পৌঁছতে পারেনি পাকস্থলিতে। রক্তে মেশার আগেই হারিয়ে গেছে কোন এক বিশাল মরুভূমিতে। কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়া এক ফোঁটা-দু ফোঁটা জল তখন রক্তের চেয়েও বেশী আঠাল। আবার চোখ খুলে দেখি লোকারণ্য দিন সশব্দে ঘিরে আছে আমার প্রতিটা মুহুর্তকে। এর আগে কে জানত, সুর্যের আলোও এত কালো হয়! আলকাতরার মতো কালো সূর্যরশ্মি গোগ্রাসে শুষে নিচ্ছে চাঁদের আলোকে। দিন যে এত অন্ধকার হয় কে জানত! অন্ধকার পৃথিবীর অন্ধকার জগতের প্রাণী আমরা। মাটি আঁকড়ে প্রতিনিয়ত অন্ধকার হাতড়ে বেড়াই এক দেশ থেকে অন্য দেশে। দিনের অন্ধকার শেষে রাতের অন্ধকার নামলে শ্বাপদের মতো ধ্বক-ধ্বক করে জ্বলে ওঠে আমাদের চোখ। দুরন্ত অভ্যাসবশে বেড়িয়ে পড়ে হিংস্র দাঁত। সকলেই শিকার, সকলেই শিকারী! নেকড়ের মতো রক্ত লোলুপতা নিয়ে ধেয়ে যাই একে অন্যের দিকে। দুই হাতে শানান তীক্ষ্ণ আক্রমনোদ্যত নখযুক্ত থাবা বাড়িয়ে নিজের অজান্তে কখন অরক্ষিত করে দিই নিজেদের হৃদয়। অন্যের রক্তাক্ত হৃদয় দেখার প্রচন্ড জিঘাংসার শেষে নিজেরাই ফিরে আসি রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত শরীর নিয়ে নিজেদের দূর্গন্ধময় অন্ধকারাচ্ছন্ন গুহায়। বিস্মৃতির ভারে ভারাক্রান্ত আমরা এক সময় আবার বেড়িয়ে আসি নতুন কোন শিকারের আশায়, নতুনভাবে ক্ষতবিক্ষত হতে। আবার লোলুপতায় শান দিই নখ ও দাঁতে। অরক্ষিত এই পৃথিবীর প্রতিটা বস্তু ধ্বস্ত আজ। একদিকে নিরন্তর শ্বাপদের লড়াই অন্যদিকে পতঙ্গদের ফুলের পরাগমন্ডলের গভীর থেকে গভীরে অবারিত বিচরন। নিত্য- নৈমিত্তিক আঘাত প্রত্যাঘাতে সমস্ত কোমলতা লুপ্ত। আজ আর কুঁড়িরা নিজেকে সূযর্মূখী করে নিজেদের মেলে ধরে না। আজ আর রামধনুরা হঠাৎ করে প্রজাপতি হয়ে রঙিন হয়ে যায় না। আজ সূর্যের আলো এতটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন যে, চাঁদের আলো ধার করেও সে নিকষ কালো। আর তাই আমার কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়া এক ফোঁটা-দু ফোঁটা জল রক্তের চেয়েও বেশী আঠাল।

Sunday, September 17, 2006

নামহীন (১৭.০৯.০৬)

তুমি জান না সখী, কত কষ্ট বুকে নিয়ে আমি বাঁচি। এক সমুদ্র কান্না বুকে চেপে বিনিদ্র রাত কাটাই আমি। তুমি জান না, নিরবিচ্ছিন্ন অসংখ্য প্রগলভতা ঘিরে থাকে আমার রাত্রি-দিন। চিরায়ত কিছু স্বপ্ন ছবি আমার মস্তিষ্কে আলো-ছায়া এঁকে যায়। তুমি জান না, তোমার আনত চোখের মদিরতা আমার বুকে জাগায় কালবৈশাখী। জল ভেজা প্রবল হাওয়ার ঝাপটা লাগে মুখে, বুজে আসা চোখ ছুঁয়ে যায় ঝলসে ওঠা তরিৎশিখা। তুমি জান না, তোমার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া অগোছালো চুল বেয়ে বয়ে যায় আমার কল্পনার পক্ষীরাজ। তোমার সিঁথির আল বেয়ে উড়ে যায় মন পাখী তোমার দিকে ডানা মেলে। তুমি জান না, তোমার আধভেজা মৃদু ঠোঁট লাল শালুকের চেয়েও বেশী নেশাতুর। নিঃশব্দে প্রতিফলিত তোমার অধরের ঔজ্জ্বল্য ঝলসে দেয় আমার চোখ, সংঞ্জা হারানর আগে পযর্ন্ত। তুমি জান না, তোমার দুই ভুরুর মাঝে আঁকা টিপটা, উড়িয়ে নিয়ে যায় সব মন খারাপ করা অগোছালো ভেসে বেড়ান শরতের মেঘগুলোকে। ঘুমের মাঝে আমার স্বপ্নে, ছুঁয়ে যায় আমার সব না বলা কথাগুলোকে। তুমি জান না, তোমার কাঁধ থেকে খসে পড়া শাড়ির আঁচল, আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমাকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে বেড়ে ওঠে ঠিক একটা মাধবীলতার মতো। তুমি জান না অনেক কিছুই। তাই এত সহজে ধুলায় ছড়াও বহুমূল্য সম্পদ। তুমি জান না, কখন এককনা রোদ হঠাৎ হীরে বানিয়ে দেবে একবিন্দু জলকে। তুমি জান না, কোনদিন আমার চোখ ছলকে ওঠা জলে অথৈ মহাসমুদ্রের জন্ম হবে। তুমি জান না অনেক-অনেক কিছু, তাই এত অবুঝ তুমি!

Thursday, September 14, 2006

নামহীন (১৩.০৯.০৬)

এক টুকরো বরফ বুকের ওপর,
এক ফোঁটা নীল রক্ত ঝড়ে পড়ে,
হৃদয় ঘিরে জমাট শীতলতা,
শীতল শরীর হাওয়ায় ভেসে চলে।

স্খলিত হাত ছুঁয়ে যাওয়া হাওয়া,
নিথর চোখের স্বপ্ন ধুয়ে ফেলে,
বন্ধ মনের অন্ধ চিলেকোঠা
বিষাদঘন আলোয় উড়ে চলে।

উড়ে চলে লক্ষ জোনাকিরা,
উড়ে চলে মন্দ মৃদু আশা,
বিবর্ণ সব স্বপ্ন ডানায় চড়ে
ওড়ে আমার আগুন ভেজা হাসা।

উড়ি আমি কখনও বা ভাসি,
ডুবি আমি গভীর অথৈ জলে,
ফুসফুসে জল, বদ্ধ শ্বাসের মাঝে
আমার চোখে তোমার চোখ ভাসে।

তোমার দেওয়া স্বপ্ন নিয়ে আমি,
উড়েছিলাম মেঘের পাশে পাশে,
ছিন্ন ডানা, বুলেট এখন বুকে
চোখে তবু তোমার ছবি ভাসে।

আসব আবার তোমার কাছে আমি,
বৃষ্টি হয়ে পড়ব আমি ঝড়ে,
শীতলতায় মুছবো তোমার জ্বালা
শীতল আমি থাকব তোমার পাশে।