Wednesday, November 07, 2007

নামহীন (০৬.১১.০৭)

গভীর অন্ধকার, বিশ্বময়, নিশ্ছেদ্র,
আর সঙ্গে থাকা ধোঁইয়াটে জলের গন্ধ।
তুমি-আমি দাঁড়িয়ে থাকি, সঙ্গী বিশাল গাছটা
প্রবল জলের ফোঁটা ঘোলাটে করে দেয় চারিদিক।

উদ্বাহু গাছটা ভিজছে প্রানভরে,
তার প্রতিটা কোষে এঁকে দিচ্ছে জলের দাগ
তার নিচে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি,
প্রবল বেগে ধেয়ে আসা জলকনা
তীরের মতো জলকনা তোমার-আমার মুখে-শরীরে।

উষ্ণ পৃথিবী শীতল হচ্ছে,
যেমন হচ্ছে গাছটা আর তুমি-আমি।
শীতলতা মুছে দিচ্ছে যাবিতীয় উষ্ণতা শরীরের
রন্ধ্রে-রন্ধ্রে বর্ষার শীতল পদক্ষেপ, সুনির্দিষ্ট,
ঘিজে যাওয়া প্রতিটা রোমকূপ স্নাত সেই শীতলতায়।

ক্রোধান্বিত প্রকৃতি, শাসনহীন বর্ষন
পাগলপ্রায় সিক্ত বসনা গাছটা আর
তার আশ্রয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তুমি আর আমি।
শীতে কাতর তুমি ভেজা তিতিরের মতো কাঁপছ
বাহু বেষ্টনে জড়িয়ে আছি তোমায়, সজোরে।

গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছ তুমি
প্রানপনে খুঁজছ উষ্ণতা আমার বুকের মধ্যে।
অবারিত আমার বুকে উষ্ণতার ভান্ডার
উজাড় করে দিচ্ছি সমস্ত তোমায়
বাহুবন্ধে তুমি মিলেমিশে একাকার শীতলতা আর উষ্ণতায়।

ধীরে ধীরে সব হয় শান্ত
আকাশ-বাতাস আর ভিজে থাকা গাছটাও,
আমরা পা বাড়াই সামনে
পড়ে থাকে সঙ্গী গাছটা আর আমাদের গন্তব্য, বাড়ি।

হঠাৎ ঝটকা লাগে, চোখের সামনে ঘন অন্ধকার
চোখ কচলে তাকাই, এটা স্বপ্ন!
এটা স্বপ্ন, যা আমার চোখের নিচে থাকে।
এটা স্বপ্ন, যা আমি তোমার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।
এটা স্বপ্ন, যা হয়ত ভাগ করা যায় না।
এটা স্বপ্ন, যা হয়ত একান্তই আমার!

নামহীন (০৬.১১.০৭)

সমান্তরাল রেখা বয়ে যায়
পরিচ্ছদহীন জীবনের গা বেয়ে,
উন্মুক্ত কলম গেঁথে যায়
ত্বক চিরে ফুটে ওঠা রক্ত সৃষ্টি করে অক্ষর।

প্রতি পাতায় থরে থরে সাজান শব্দগুচ্ছ
ভিন্ন আকারে রাখা, ভিন্ন রূপে,
জ্ঞানতঃ, কিছু বা অজ্ঞানে।
কিছু বয়ে যায় শব্দনালী বেয়ে
কিছু চিরে দেয় স্বরযন্ত্র, নির্বাক, চিরকাল।

জমে থাকা অক্ষর সাজায় বাগান
রঙিন, সজীব, আকুল স্বপ্ন চোখের পাতায়
ভেঙে পড়া কিছু ইমারত, পাঁজর বেড়িয়ে থাকা
প্রচন্ড আগুন, গলে পড়ে রেটিনা ফোঁটায় ফোঁটায়,
শক্ত জমাট বাধা কালো রক্তের মতো।

কখনও বা অক্ষর হয় শীতল তরল,
রক্তপ্রবাহে তার কোমল ছাপ
শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়া মৃদু মন্দ আমেজ।
অথবা সশব্দে ফাটিয়ে দেয় শিরা-ধমনী,
বিরামহীন স্রাব শরীর জুড়ে।

নিঃশব্দ অক্ষর প্রবাহ জীবন জুড়ে
ধারাল অথবা ভোঁতা, হত অথবা ঘাতক।
জিভ থেকে গলা তেতো হয়ে থাকে
শূন্য চাহনি, বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ,
সামনে পড়ে থাকা মসীলিপ্ত অন্ধকার বা চোখ ধাঁধান আলো,
নিদ্রাহীন রাত্রি, প্রতিটা মানুষ আর কিছু অক্ষরগুচ্ছ।