Saturday, December 13, 2008

নামহীন (১২.১২.০৮)

অগোছালো কিছু স্মৃতি পড়ে থাকে মনের দুপাশে,
সেই কবে ফেলে আসা পুকুরপাড়, ধান ক্ষেত,
ফেলে আসা নির্জন দুপুরে তেঁতুল কিংবা পেয়ারা পাড়া,
কালবৈশাখীর ধূলোঝড়ে আমকুশী কুড়োনো।

ফেলে আসা স্কুলফেরৎ দুরন্তপনা বান্ধবীদের সাথে
সহপাঠী ছেলেদের নিয়ে উৎসাহ, কিছু নির্ভেজাল ঠাট্টা,
ফেলে আসা পুকুর তোলপাড় সাঁতার, ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা,
বাড়ি ফিরে ভিজে গায়ে মা’র বকুনি বা মার।

পড়ে থাকে স্মৃতি কালি পড়া ক্লান্ত চোখের নীচে,
লন্ঠনের সামনে ভাই-বোনের ঝগড়া, পড়ার বই খুলে,
আনিচ্ছাসত্ত্বেও পড়া ফেলে সবার জন্য রাঁধতে বসা,
প্রচন্ড অভিমান, ‘ভাইকেই সবাই ভালোবাসে’!

সেই কবে ফেলে আসা সেই দুরন্ত অভিমান,
ভাইয়ের নতুন জামা, তার সেই পুরানো ফ্রক!
আবার মেলা থেকে কিনে এনে বাবার দেওয়া
দু’টাকার কাঁচের চুড়িতে এত আনন্দ থাকে!

ফেলে আসা সব অর্ধাহার অনাহার দিনগুলো
অপুষ্টিক্লিষ্ট মায়ের মুখ, অভাবের লম্বা ছায়া
বাবার প্রতিরাতে মদ খেয়ে আসা, মাকে মারধোর
বিছানায় জান্তব ক্ষুধা নিবারণ।

নিদারুন দারিদ্রে আশার আলো সুভান্যুধায়ী কাকা
শহরের কাজের খোঁজ নিয়ে, মাসে হাজার টাকা,
বাবার চোখে অর্থস্বপ্ন, মা’র চোখে জল
লেখাপড়া শিখে বড় হওয়ার স্বপ্ন তখন বিশ বাঁও জলে!

অবশেষে গন্তব্য শহরের মহল্লা সুভাকাঙ্খীর হাত ধরে
হাত বদল এক সুভাকাঙ্খী থেকে আর এক!
স্থায়ী ঠিকানা হল অপরিসর এক কুঠুরি, নতুন নামকরন
শত অনুনয় বিনয় বন্দি থাকে চার দেওয়ালেই।

নতুন নতুন শাড়ি, প্রতিরাতে নতুন করে সাজে
নিজের পেটের ক্ষিধে মেটায় কোনো পুরুষের যৌনক্ষিধে!
পুঞ্জীভূত অভাব আর্থিক অভাব পেড়িয়ে কোথায় জমেছে
কেউ জানে না!

সেই কবে ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি আজ ধূসর
ঠিক পুরানো ছবি অথবা ভেজা পান্ডুলিপির মতো।
এই ভাবে বসে থাকলে ভাইটা গলা জড়িয়ে ধরতো,
কতো বড় হয়ে গেছে এতদিনে, হয়তো তাকে ভূলেও গেছে!

সত্যিই কি অবস্থার ফের বদল হয়েছে তার?
এক অনিচ্ছুক জীবন থেকে আর এক অনিচ্ছুক জীবনে এসেছে,
প্রতি রাতে নিত্য নতুন পুরুষ শয্যায় সে ভাবে,
তার মাও কি এভাবে তার বাবার কাছে ভোগ্য ছিলনা?
শুধু কি তারাই বিক্রি হয় প্রতিদিন,
এখনও মেয়ে মানেই কি পন্য নয়, কোনো না কোনোভাবে!

Sunday, July 27, 2008

নামহীন (২৭.০৭.০৮)

নির্মেঘ দুপুরে উড়ে যাওয়া তৃষ্ণার্ত পাখিদের ডানা
খুঁজে ফেরে জল আকাশের বুকে,
শহরের বুক চিরে যাওয়া নল ফুঁড়ে বেড়োনো জল কি
তৃষ্ণা নিবারনে বৃষ্টির সমকক্ষ হতে পারে?

রাতের রাজপথ ছেয়ে থাকে মায়াবী আলোতে
আলোকিত ক্ষুধার্ত যানবাহন ছুটে যায়
চারিদিক আলোকিত করে,
তবু কি তারা সমকক্ষ হতে পারে দিনের আলোর?

মন যখন খোঁজে তোমায়,
চারপাশের মানুষের ভীড় আর হাসি
ছুঁতে পারে না আমায় কোনোভাবেই,
কোনোকিছুই সমকক্ষ নয় তোমার ছোঁয়ার!

কত বিবর্ণ মুহুর্ত কাটিয়েছি আমরা,
কত-শত রাগ অভিমান, সরিয়ে নিয়েছি নিজেকে,
তবু তোমার সাথে কাটানো মুহুর্তগুলো
অন্য সব কিছুর থেকে ভীষন ভাবে আলাদা!

ফুল যতই ম্রিয়মান হোক
তবু সে কাগুজে ফুলের থেকে অনেক আলাদা
স্পর্ষতঃ এবং সুগন্ধে!
তুল্যমূল্য বিচারের কোন জায়গা নেই সেখানে।

তবু কোন এক ছলনায় নিজেকে ভুলিয়ে রাখি
অসমকক্ষ সবকিছুর মাঝে বেঁধে রাখি নিজেকে,
ঠকাই নিজেকে প্রতিনিয়ত, আর কখনো
উড়ে যাই আকাশে অসম্ভাব্য বৃষ্টির খোঁজে!

Friday, March 07, 2008

নামহীন (০৭.০৩.০৮)

কিছু গোলাপী নরম রেশম, ভাবোনি কখোনো
গলায় ফাঁস হয়ে শ্বাসরোধ করবে।
ভাবোনি এতদিন দেখা সবুজ স্বপ্ন
ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া করবে দিন-রাত্রি।

নির্মেঘ তারাভরা আকাশ ভাবোনি কখোনো
তরিৎপ্রবাহে পুড়িয়ে দেবে তোমার শরীর।
সাজানো বাগানের ফুলের কাঁটা যিশুর মতো
ক্রুশবিদ্ধ করবে তোমায়, ভাবোনি কখোনো।

হে পার্থ, দেখোনি কিছুই,
তোমার সামনে ঘটে যাওয়া তাৎক্ষনিক অভিনয়
ভেবে এসেছ জীবনের সুন্দরতম উপভোগ্য মুহুর্ত।
সিঞ্চিত করেছ নিজের হৃদয়
নির্মোঘ কিছু প্রলোভনে।

হে পার্থ, শোনোনি কিছুই,
তোমার কানে ফিস্‌-ফিস্‌ করে বলে যাওয়া বাতাসকে
ফিরিয়ে দিয়েছ বারবার নিদারুন অবজ্ঞায়।
কথার বেড়াজালে বন্দি হয়ে বানিয়েছ
বালির প্রাসাদ, মূর্খের মতো।

হে পার্থ, বোঝোনি কিছুই,
অন্ধবিশ্বাসে পথ চলেছ বুদ্ধিমত্তাকে পাশে সরিয়ে
হৃদয় আর মস্তিস্কের সংযোগ ছিন্ন করে।
তার প্রতিটা কথা ধ্রুব সত্য বলে মেনে এসেছ,
সত্যের আদলে মিথ্যা সংগ্রহ করে গেছ শুধু।

হে পার্থ, শেখনি কিছুই,
প্রেম আর যুদ্ধে সবই ন্যায়সঙ্গত!
যুদ্ধ আর প্রেমে তফাৎ নেই কিছুই,
যুদ্ধক্ষেত্রে দুইপক্ষের মধ্যে আড়াল থাকেনা কিছু
শুধু প্রেম থাকে ভালোবাসার মোড়কে!

Wednesday, March 05, 2008

নামহীন (০৫.০৩.০৮)

আস্তাকুঁড়ে বেঁচে থাকে সাদা-কালো পৃথিবী
খুঁটিয়ে খাওয়া মেয়েটার অভুক্ত পেটে,
দোকানের পাশে ফেলে যাওয়া স্যুট-টাই পরিহিত
লোকটির উচ্ছিষ্ট দিয়ে তার ক্ষুধা নিবারনে।

মেয়েটির শতছিন্ন নোংরা ফ্রক
চেটেপুটে নিতে চায় প্রতিটা খাদ্যকনা,
প্রখর সূর্যালোকেও দিনকে বড় ম্লান দেখায়
ঘূর্ণায়মান পৃথিবী সরে যায় কক্ষপথ থেকে
দূরে আরো দূরে!

আকাশের সমস্ত নীল ফিকে হয়ে যায়
বুভূক্ষু পেট গ্রাস করে সবকিছু একে-একে,
আমাদের ক্ষুধার্ত মন ছড়িয়ে দেয় ক্ষিদে
লক্ষ-লক্ষ পেটে, ক্রমাগত, দ্রুত।

নির্ভেজাল উল্লাসে ছড়িয়ে পড়া রঙিন তরল
অথবা প্লেটে পড়ে থাকা রাশি-রাশি খাদ্য
শুষে নেয় সব রঙ সবকিছু থেকে,
উজ্জ্বল রঙিন আলো ছুঁতে পারে না
সেই মেয়েটির মলিন মুখটাকে।

আমরা দেখি সাদা-কালো পৃথিবীটাকে
রঙিন কাঁচ দিয়ে, ভান করি রঙিন থাকার,
আর আচ্ছাদহীন ফুটপাথে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটির
নোংরা গালের অস্রুরেখায় চাঁদ ঢেলে দেয় রঙ,
ঘুমের দেশে মেয়েটি বোনে রামধনু
স্বপ্ন দেখে রঙিন থাকার, সবাইকে রঙিন রাখার!

Saturday, January 26, 2008

নামহীন (০৯.০১.০৮)

আটকে থাকি আমি অগোছালো সম্পর্কের জটে,
অস্পষ্ট ভালবাসা আর প্রতিটা ব্যর্থ প্রচেষ্টা
সজোরে নাড়িয়ে দিয়ে যায় আমায় আমূল
অসহ্য তীব্র কোন শব্দ আমার কানের মধ্যে অনুরনিত।
দু-হাতে চেপে ধরি কান, রক্তাভ চোখ মেলে চাই,
পৃথিবীর প্রতিটা রঙ আজ অচেনা লাগে
অচেনা লাগে নিজেকে আর প্রতিটা স্মৃতিকে!

একাকিত্ত্ব বড় কঠিন,
কখনও একাকিত্ত্ব হারিয়ে দেয় নিজেকে
ঘিরে ধরা অসংখ্য স্মৃতির ভিড়ে।
বৃথা চেষ্টা করি পালাবার, অগনিত স্মৃতি
অথবা জনবহুল রাজপথ ঘিরে থাকে সারাক্ষন।
এক পা-এক পা পিছোই নিরন্তর
অবশেষে দাঁড়াই এসে কোন এক গভীর খাদের ধারে,
ইচ্ছা হয় তলিয়ে যেতে শান্ত ভাবে।

দ্বিধা বিভক্ত মন খুঁজে ফেরে কোন অবাস্তব সমাধান,
জীবন সজীব-সরল অথবা কল্পনাতীত রুক্ষ-শুস্ক।
স্বপ্ন হাওয়ায় জন্ম নেওয়া প্রতিটা আশা
হল্‌কা হাওয়ায় শুকনো পাতার মতো উড়ে যায়।
রাস্তায় চলা প্রতিটা দ্রুতগামী গাড়ির
তীব্র আলোর সামনে দাঁড়িয়ে পড়তে মন চায়,
পরিশেষে নিকষ অন্ধকার!

তবুও ইচ্ছা ইচ্ছাই থেকে যায়, জীবন চলে নিজের মতো
প্রতিটা সময় চলে নিজের মতো ঘড়ির হাত ধরে,
তবুও হাসি নিয়মিত, কথা বলি-গান গাই সময় মতো!
তবুও পার করি প্রতিটা মুহুর্ত সকলের সঙ্গে মুখোশ এঁটে
আর চিন্তা রাশি ভিড় করে মনে, ব্যথা ছড়ায় মাথা ঘাড়ে,
বয়ে চলি জীবন, মৃত্যুর চেয়েও বড় শাস্তি নিয়ে!

Sunday, December 23, 2007

নামহীন (২২.১২.০৭)

জীবন বয়ে চলে আলো-ছায়া পথ ধরে,
প্রতিটা সম্পর্ক সৃষ্টি করে নতুন সম্পর্কের,
কখন যেন চোখের জল মিশে যায়
স্নিগ্ধ মধুর হাসিতে,
চোখের তারা ঠিকরে বেরোয় আলো!

সময় বয়ে যায় ছন্দবদ্ধ মঞ্চস্থিত নাচের মতো,
হাতে-হাত প্রতিটা পদক্ষেপ মিলিয়ে দুলিয়ে যায় মন,
ঘন আঁধার কালো মেঘ সরে যায় দমকা হাওয়ায়
রোদ ঝলমল চারিদিক উজ্জ্বল-চঞ্চল।

প্রতিটা সম্পর্ক দিয়ে যায় কতকিছু
জীবনকে চেনায় প্রতি মুহুর্তে নতুন করে,
বুকের গভীরের রঙ ছুঁয়ে যায় মনের আঙিনা
রাঙিয়ে দেয় প্রতিটা পল, ঠিক একটা রামধনুর মতো।

সুখ-দুঃখ-বেদনা প্রতি মুহুর্তে ঘিরে থাকে নানা সম্পর্ক
সাদা-হলুদ-গোলাপী অথবা লাল!
বাড়িয়ে দেয় হাত, জড়িয়ে ধরে আঁকড়ে,
মাথায়-পিঠে বুলিয়ে দেওয়া হাত
শক্তি ছড়িয়ে দেয় অসীম ভরসায়।

কখনও বা প্রবল ঝঞ্ঝার মধ্য দিয়ে যায়
অভিমান-ক্ষোভ-ক্রোধ ভাসিয়ে নিয়ে যায়,
দোদুল্যমানতায় প্রানপনে আঁকড়ে থেকে
অবশেষে ঝড় শেষে হালকা বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়ে যায় মন।

প্রচন্ড ভালো লাগে জীবন
প্রচন্ড একাত্ত্ব হয় সম্পর্কের লোকগুলি,
ঝড় অনেক দামী, ঝড় শেষে রোদ হয় আরো মিঠে,
প্রতিটা ঝড় শেষ হলে ভরসা জাগে মনে
মনে হয়, আমাদের জীবন ও সম্পর্ক
অতিক্রান্ত করতে পারে যে কোন ঝঞ্ঝা অসম সাহসে
রুখতে পারে ভাঙন যেকোন প্রলয়ের মুখে,
জীবন মানেই যে সৃষ্টি, কিছু সম্পর্ক বুনে বুনে!

Wednesday, November 07, 2007

নামহীন (০৬.১১.০৭)

গভীর অন্ধকার, বিশ্বময়, নিশ্ছেদ্র,
আর সঙ্গে থাকা ধোঁইয়াটে জলের গন্ধ।
তুমি-আমি দাঁড়িয়ে থাকি, সঙ্গী বিশাল গাছটা
প্রবল জলের ফোঁটা ঘোলাটে করে দেয় চারিদিক।

উদ্বাহু গাছটা ভিজছে প্রানভরে,
তার প্রতিটা কোষে এঁকে দিচ্ছে জলের দাগ
তার নিচে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি,
প্রবল বেগে ধেয়ে আসা জলকনা
তীরের মতো জলকনা তোমার-আমার মুখে-শরীরে।

উষ্ণ পৃথিবী শীতল হচ্ছে,
যেমন হচ্ছে গাছটা আর তুমি-আমি।
শীতলতা মুছে দিচ্ছে যাবিতীয় উষ্ণতা শরীরের
রন্ধ্রে-রন্ধ্রে বর্ষার শীতল পদক্ষেপ, সুনির্দিষ্ট,
ঘিজে যাওয়া প্রতিটা রোমকূপ স্নাত সেই শীতলতায়।

ক্রোধান্বিত প্রকৃতি, শাসনহীন বর্ষন
পাগলপ্রায় সিক্ত বসনা গাছটা আর
তার আশ্রয়ে দাঁড়িয়ে থাকা তুমি আর আমি।
শীতে কাতর তুমি ভেজা তিতিরের মতো কাঁপছ
বাহু বেষ্টনে জড়িয়ে আছি তোমায়, সজোরে।

গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছ তুমি
প্রানপনে খুঁজছ উষ্ণতা আমার বুকের মধ্যে।
অবারিত আমার বুকে উষ্ণতার ভান্ডার
উজাড় করে দিচ্ছি সমস্ত তোমায়
বাহুবন্ধে তুমি মিলেমিশে একাকার শীতলতা আর উষ্ণতায়।

ধীরে ধীরে সব হয় শান্ত
আকাশ-বাতাস আর ভিজে থাকা গাছটাও,
আমরা পা বাড়াই সামনে
পড়ে থাকে সঙ্গী গাছটা আর আমাদের গন্তব্য, বাড়ি।

হঠাৎ ঝটকা লাগে, চোখের সামনে ঘন অন্ধকার
চোখ কচলে তাকাই, এটা স্বপ্ন!
এটা স্বপ্ন, যা আমার চোখের নিচে থাকে।
এটা স্বপ্ন, যা আমি তোমার সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাই।
এটা স্বপ্ন, যা হয়ত ভাগ করা যায় না।
এটা স্বপ্ন, যা হয়ত একান্তই আমার!

নামহীন (০৬.১১.০৭)

সমান্তরাল রেখা বয়ে যায়
পরিচ্ছদহীন জীবনের গা বেয়ে,
উন্মুক্ত কলম গেঁথে যায়
ত্বক চিরে ফুটে ওঠা রক্ত সৃষ্টি করে অক্ষর।

প্রতি পাতায় থরে থরে সাজান শব্দগুচ্ছ
ভিন্ন আকারে রাখা, ভিন্ন রূপে,
জ্ঞানতঃ, কিছু বা অজ্ঞানে।
কিছু বয়ে যায় শব্দনালী বেয়ে
কিছু চিরে দেয় স্বরযন্ত্র, নির্বাক, চিরকাল।

জমে থাকা অক্ষর সাজায় বাগান
রঙিন, সজীব, আকুল স্বপ্ন চোখের পাতায়
ভেঙে পড়া কিছু ইমারত, পাঁজর বেড়িয়ে থাকা
প্রচন্ড আগুন, গলে পড়ে রেটিনা ফোঁটায় ফোঁটায়,
শক্ত জমাট বাধা কালো রক্তের মতো।

কখনও বা অক্ষর হয় শীতল তরল,
রক্তপ্রবাহে তার কোমল ছাপ
শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়া মৃদু মন্দ আমেজ।
অথবা সশব্দে ফাটিয়ে দেয় শিরা-ধমনী,
বিরামহীন স্রাব শরীর জুড়ে।

নিঃশব্দ অক্ষর প্রবাহ জীবন জুড়ে
ধারাল অথবা ভোঁতা, হত অথবা ঘাতক।
জিভ থেকে গলা তেতো হয়ে থাকে
শূন্য চাহনি, বিক্ষিপ্ত পদক্ষেপ,
সামনে পড়ে থাকা মসীলিপ্ত অন্ধকার বা চোখ ধাঁধান আলো,
নিদ্রাহীন রাত্রি, প্রতিটা মানুষ আর কিছু অক্ষরগুচ্ছ।