নামহীন (১২.১২.০৮)
অগোছালো কিছু স্মৃতি পড়ে থাকে মনের দুপাশে,
সেই কবে ফেলে আসা পুকুরপাড়, ধান ক্ষেত,
ফেলে আসা নির্জন দুপুরে তেঁতুল কিংবা পেয়ারা পাড়া,
কালবৈশাখীর ধূলোঝড়ে আমকুশী কুড়োনো।
ফেলে আসা স্কুলফেরৎ দুরন্তপনা বান্ধবীদের সাথে
সহপাঠী ছেলেদের নিয়ে উৎসাহ, কিছু নির্ভেজাল ঠাট্টা,
ফেলে আসা পুকুর তোলপাড় সাঁতার, ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা,
বাড়ি ফিরে ভিজে গায়ে মা’র বকুনি বা মার।
পড়ে থাকে স্মৃতি কালি পড়া ক্লান্ত চোখের নীচে,
লন্ঠনের সামনে ভাই-বোনের ঝগড়া, পড়ার বই খুলে,
আনিচ্ছাসত্ত্বেও পড়া ফেলে সবার জন্য রাঁধতে বসা,
প্রচন্ড অভিমান, ‘ভাইকেই সবাই ভালোবাসে’!
সেই কবে ফেলে আসা সেই দুরন্ত অভিমান,
ভাইয়ের নতুন জামা, তার সেই পুরানো ফ্রক!
আবার মেলা থেকে কিনে এনে বাবার দেওয়া
দু’টাকার কাঁচের চুড়িতে এত আনন্দ থাকে!
ফেলে আসা সব অর্ধাহার অনাহার দিনগুলো
অপুষ্টিক্লিষ্ট মায়ের মুখ, অভাবের লম্বা ছায়া
বাবার প্রতিরাতে মদ খেয়ে আসা, মাকে মারধোর
বিছানায় জান্তব ক্ষুধা নিবারণ।
নিদারুন দারিদ্রে আশার আলো সুভান্যুধায়ী কাকা
শহরের কাজের খোঁজ নিয়ে, মাসে হাজার টাকা,
বাবার চোখে অর্থস্বপ্ন, মা’র চোখে জল
লেখাপড়া শিখে বড় হওয়ার স্বপ্ন তখন বিশ বাঁও জলে!
অবশেষে গন্তব্য শহরের মহল্লা সুভাকাঙ্খীর হাত ধরে
হাত বদল এক সুভাকাঙ্খী থেকে আর এক!
স্থায়ী ঠিকানা হল অপরিসর এক কুঠুরি, নতুন নামকরন
শত অনুনয় বিনয় বন্দি থাকে চার দেওয়ালেই।
নতুন নতুন শাড়ি, প্রতিরাতে নতুন করে সাজে
নিজের পেটের ক্ষিধে মেটায় কোনো পুরুষের যৌনক্ষিধে!
পুঞ্জীভূত অভাব আর্থিক অভাব পেড়িয়ে কোথায় জমেছে
কেউ জানে না!
সেই কবে ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি আজ ধূসর
ঠিক পুরানো ছবি অথবা ভেজা পান্ডুলিপির মতো।
এই ভাবে বসে থাকলে ভাইটা গলা জড়িয়ে ধরতো,
কতো বড় হয়ে গেছে এতদিনে, হয়তো তাকে ভূলেও গেছে!
সত্যিই কি অবস্থার ফের বদল হয়েছে তার?
এক অনিচ্ছুক জীবন থেকে আর এক অনিচ্ছুক জীবনে এসেছে,
প্রতি রাতে নিত্য নতুন পুরুষ শয্যায় সে ভাবে,
তার মাও কি এভাবে তার বাবার কাছে ভোগ্য ছিলনা?
শুধু কি তারাই বিক্রি হয় প্রতিদিন,
এখনও মেয়ে মানেই কি পন্য নয়, কোনো না কোনোভাবে!