Friday, July 28, 2006

নামহীন (০২.১১.০৪)

কষ্টকর কিছু নিদারুন স্বপ্নের হাতছানিতে আমি পাড়ি জমিয়েছিলাম সীমাহীন মহাসমুদ্রে। সিন্দবাদের মতো সামুদ্রিক ঝঞ্ঝা পেড়িয়ে, কোনও কাঠের পাটাতনে ভর করে নিস্তেজ হয়ে পৌঁছেছিলাম এক মরুদ্বীপে। সেই পীলাভ মাটির বুকে বাড়িয়ে তুলতে চেয়েছিলাম একখন্ড সবুজ। ইশদ উন্মোচিত অর্গল দিয়ে ঢুকে পড়া হাওয়া এলোমেলো করে উলটে দিয়েছিল আমার নিষিদ্ধ পান্ডুলিপি। স্থির তড়িৎএর হঠাৎ সংস্পর্ষে আমি ছিটকে গিয়েছিলাম কালো থেকে আরো কালোয়। নিষিদ্ধ কোনও ক্রুদ্ধ অভিশাপে আমি হয়েছিলাম প্রস্তরিভূত। আবার বেড়ে উঠেছিলাম পাঁকের মধ্যে কোনও শালুকের বুক চিরে। ভ্রমরের পাখায় পাখায় উড়ে বেড়িয়েছিলাম এই ফুল থেকে ওই ফুলে। নিভন্ত আগুনের মৃদুমন্দ ধোঁয়ার রূপরেখাকে আমি চেয়েছিলাম কালপুরুষের সূদীর্ঘ ছায়ায় মিশিয়ে দিতে। নীলাভ চাঁদটার বুকে ধারালো ছুরি দিয়ে গভীর রক্তাক্ত ক্ষত করে লিখতে চেয়েছিলাম তোমার নাম, পারিনি! কি করে পারব? এমনিতেই ঐ চাঁদটার বুকে কোনও হৃদয়হীনের দেওয়া ক্ষতচিহ্নগুলো এখনো স্পষ্ট! হাত বেয়ে নেমে আসে অসংলগ্ন শব্দগুচ্ছো। অর্থহীন, বর্ণহীন, গন্ধহীন কিছু কুৎসিত কদাকার ক্ষুধার্ত অক্ষরসমষ্টি। এগুলোকেই তো লোকে প্রলাপ বলে তাই না? মনের মধ্যে আকুলি বিকুলি করা অজস্র শব্দগুচ্ছো নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে অবাধ্য প্রক্ষেপিত হয়। তা আমি চাই বা না চাই। অসংযত শাসনে মন সাড়া দেয় না। বিষাক্ত উদ্গার শেষে নিস্তেজ হয়ে পড়ি আমি। ধীর প্রবাহপমানা কোনও নদীর পাদদেশে আমি তলানি পলি আঁকড়িয়ে ধরি, ছড়িয়ে যাই মাটিতে। সাপের মতো পাকিয়ে পাকিয়ে ওঠা জংলা লতাগুলোকে দিই প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়। অবশেষে ফুল ধরে সেই অযত্নে লালিত জংলি লতাগুলোয়। অজস্র রঙিন বাহারী ফুল। তাদের তীব্র গন্ধ আমার শরীরে মাদকতা ছড়িয়ে দেয়। মাদকতার তো কোনও প্রকারভেদ হয়না! তোমার আকাশী ওড়নার মৃদুমন্দ মাদকতাই বল বা ঐ নীলাভ অর্কিডটার তীব্র মাদকতা, তফাৎ তো কিছু নেই! সব মাদকতাই তো বুকে ক্ষত সৃষ্টি করে। কিছু লোক আছে যারা আজীবন ক্ষত নিয়ে বাঁচে। আর হয়তো সত্যিই, কিছু লোক আছে যারা বুকে ক্ষত রেখে যায়। চাঁদে ক্ষত রেখে যায়!

0 Comments:

Post a Comment

<< Home